পুরো দেশেই নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে জনজীবনে বেশ থমথমে অবস্থা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে না বর্তমানে। এমন অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সরব উপস্থিতি এসব আলোচনায়, আর ঠিক যেন এই ব্যাপারটির অপেক্ষাতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
বিশ্বকাপে বাজে অভিজ্ঞতার পর দেশব্যাপী অধিনায়ক ও কোচ পরিবর্তনের যে রব উঠেছিল তা এখন বিলুপ্তপ্রায়। মানুষ এখন আর খুব একটা এগুলো নিয়ে কথা বলছে না, ট্রেন্ড বদলে আলোচনার বিষয়বস্তু এখন ভিন্ন। বিশ্বকাপ শেষ করে দল দেশে ফিরেছে ১২ তারিখে কিন্তু এরপর প্রাই পাঁচদিন অতিক্রম করলেও বিসিবি ঠিক কি করছে বা করতে যাচ্ছে তা অস্পষ্ট।
বিশ্বকাপে চরম বাজে করবার পর অফিসিয়ালি গনমাধ্যম মারফত দেশব্যাপীর সামনে কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড৷ অ্যালান ডোনাল্ড, রঙ্গনা হেরাথ সহ কোচিং ইউনিটের বেশিরভাগ সদস্যের চুক্তি কেন বাড়ানো হয়নি সেটা নিয়েও আনুষ্ঠানিক কোন তথ্য নিশ্চিত কিংবা ব্যাখ্যা দেয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
মাঝে ক্রিকেট বোর্ডের একজন পরিচালক গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন, টিম ম্যানেজমেন্টের নির্দিষ্ট রিপোর্ট প্রাপ্তির পরই কেবল সিদ্ধান্ত বা ব্যবস্থা নিবে বিসিবি। কিন্তু সেই রিপোর্ট প্রাপ্তির কোন সময়সীমাও নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রধান কোচ দলের সাথে দেশে ফিরে সম্ভাব্য আলোচনাতে বসেছিলেন নির্বাচকদের সাথে। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনকে সরেজমিনে দেখা গিয়েছে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাড়িতে। কিন্তু প্রতিদিনই কোন না কোন মিটিংয়ে ঠিক কি সিদ্ধান্ত আসতে চলেছে সেটা নিয়ে কোন কিছুই বলছেনা বিসিবি।
রব উঠেছে, বিসিবি নাকি নির্বাচক প্যানেল বদলে ফেলতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে দোষটা কি শুধুই নির্বাচকদের! সে রকম নানান প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকা বিসিবি এখন অনেকটা অন্ধকারে। দিন কয়েকের মধ্যেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করবার কথা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের।
নির্বাচকদের ছাটাই করা হলে, এই সিরিজের দল নির্ধারন করবেন কারা? এতো অল্প সময়ে নতুন দ্বায়িত্ব নিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের মত গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের সিরিজে দল দেওয়া টাকে কেমন চোখে দেখছে বিসিবি? নাকি নির্বাচক প্যানেলের পরিবর্তন হচ্ছেই না আদতে! এরকম হাজারটা প্রশ্নের উত্তর নেই…
জানা গেছে, লিটন দাস ছুটি চেয়েছেন পিতা হবার কারনে স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য। তাসকিন আহমেদকেও বিশ্রাম দিতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। এ ব্যাপারগুলোতেও অস্পষ্ট বিসিবির বার্তা। টিম ম্যানেজমেন্টের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের কাউকে কাউকে প্রশ্ন করা হলেও ছুটি সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো নিয়ে লুকোচুরি যেন বিসিবির পুরনো অভ্যাস।
বিশ্বকাপে খারাপ করার কারনে বিসিবি যে সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারে সেগুলোর ব্যাপারে আলোচনা কিংবা সমালোচনা হতে পারে। সিদ্ধান্ত গুলো সঠিক কিংবা বেঠিক হতে পারে। সাধারণ মানুষ এবং গনমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া থাকবে কিন্তু একেবারেই চুপ থাকাটা কি কাম্য মোটেও!
ব্যাপারটা এমন যে, কোন কিছুই হয়নি। আগের মতই প্রবাহমান থাকবে সবকিছু একই গতিতে… নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে নামবার আগে গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত কিংবা প্রতিক্রিয়া বিসিবি জানাতে ব্যর্থ হলে বিসিবির দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
চান্দিকা হাথুরাসিংহেকে বিসিবি লম্বা সময়ের জন্য রেখে দিলে সেটির কারন ব্যাখ্যা করবার মত যথেষ্ট উত্তর কি বিসিবির কাছে আছে? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড হয়তবা আলোচনা থামাতে চুপ থেকে সময় নিয়ে এগোতে চাই কিন্তু প্রশাসন হিসেবে বিসিবির অস্পষ্ট জবাবদিহিতা এবং লুকোচরি পদ্ধতি অনুসরন বরং বিসিবির ইমেজেরই ক্ষতি করছে…
এর আগে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা ভরা মজলিশে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের জন্য বিজ্ঞাপন জোগাড় করা কঠিন বলেছেন যেটাতে ক্রিকেট বোর্ডের মান সম্মানের যথেষ্ট ক্ষতিই হয়েছে। তবুও সেটি অনুধাবন করে বিসিবির মার্কেটিং পলিসি নিয়ে কোন ব্যাখ্যা প্রদান করেনি বিসিবি কিংবা অযাচিত মন্তব্যের প্রতিবাদও করেনি বিসিবি।
প্রতিটা ক্ষেত্রেই বিসিবির এই নীতি প্রশ্নবিদ্ধ করছে খোদ বিসিবিকেই, গনমাধ্যমগুলো স্পষ্ট ব্যাখ্যার অভাবে বেশিরভাগ সময়ই ভূলে ভরা তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি মূলক সংবাদ প্রকাশে বাধ্য হচ্ছে, ক্রিকেটারদের সাথে দূরত্ব বাড়ছে… বিসিবির অনুধাবন হবে কবে?