মাঝেমধ্যে মনে হয়, সাকিব-তামিম নামক দুই সুপারস্টারের এইসময়ে একসাথে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসাটা ক্ষতিই হয়েছে এদেশের ক্রিকেটের জন্য। কেউ বিশ্বাস না করলেও, কেউ স্বীকার না করলেও…. সমর্থক থেকে শুরু থেকে, সংবাদকর্মী, বোর্ড কর্তা, টিম ম্যানেজমেন্ট, ক্রিকেটারদের সবাই (অন্তত ৯০%) মনে মনে হলেও হয় সাকিব না হয় তামিমের প্রতি অনুগত।
এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক, বরং না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। দেশের ক্রিকেটে টানা স্টারের মত থাকা এই দুইজনের তূলনা করা ঠিক না কখনোই৷ সাকিবের জায়গাতে সাকিব সেরা, এমনকি বিশ্বসেরা… তামিমের জায়গাতে তামিম দেশের সেরা…
স্বাভাবিকভাবেই সাকিব-তামিমের প্রতি আস্তে আস্তে মুগ্ধতা সবারই এসেছে কম আর বেশি। মনের মধ্যে থাকা সুপ্ত এই টানের ব্যাপারটাই নেতিবাচক পরিবেশ তৈরী করেছে সব জায়গাতে। অমীমাংসিত এই ইস্যু একটা সময় মোড় নিয়েছে যুদ্ধে…
যে কোন দেশের ক্রিকেটের উত্থানের শুরুর দিকে, কিংবা কৈশোর কালে এমন সুপারস্টারদের সংঘাত আর অস্থিরতার গল্প চাইলে অনেক পাওয়া যাবে। ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া সবখানে আছে এমন গল্প। এমনকি জড়িয়ে আছে স্যার ডন ব্রাডম্যানের নামও। একটা সময় দলই ঐ ক্রিকেটার থেকে বড় হয়েছে, তখন দলে বিশটা সুপারস্টার থাকলেও সমস্যা হয়নি।
ম্যাকগ্রা, পন্টিং, গিলক্রিস্ট, লিরা একসাথে বিশ্বজয় করেছেন কিন্তু তাদের আগের পুর্বসূরীদের মধ্যে অনেক কোন্দলের গল্প চাইলেই পাবেন গুগলে। কোন কোন ক্রিকেটারকে একঘরে করে কাউন্টি খেলতেই বাধ্য করা হয়েছে নির্দিষ্ট একজনের স্বার্থে।
তখন অস্ট্রেলিয়ার দল থেকেও ঐ ক্রিকেটারেরই কদর ছিল বেশি, পরে যখন অস্ট্রেলিয়া দলটাই বড় হয়ে উঠেছে তখন আর কোন সুপারস্টারদের নিয়ে আলাদা করে দেশের বোর্ডকে কদর করতে হয়নি, সমর্থকদেরও একজন বা দুইজনকে নিয়ে পরে থাকতে হয়নি।
বাংলাদেশের ক্রিকেটেও একটা সময় এমন মুহুর্ত আসবে যখন বোর্ড, সমর্থক, সংবাদমাধ্যমকে একজন বা দুইজনের উপর ফোকাস রাখতে হবেনা। বরং গোটা দলটাই নির্দিষ্ট একজন বা দুইজন থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে তখন এই হিংসা বা বিদ্বেষ বা এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরী হবার সুযোগ থাকবে না।
দুইজন ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত সম্পর্ক তখনই মাথা ঘামানোর কারন হয় দেশের সমর্থক, গনমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে ক্রিকেট বোর্ডের কাছে যখন ঐ দুইজন ক্রিকেটারের কাছে দেশের ক্রিকেটটা একপ্রকার জিম্মি থাকে। বোর্ড সভাপতি যেদিনই সংবাদ মাধ্যমে বলেছিলেন দেশের ক্রিকেটটা দুইভাগ হয়েছে সাকিব-তামিমের ব্যাক্তিগত সম্পর্কের কারনে। সেদিনই মূলত প্রকাশ পেয়েছে এই দুইজনের কাছে অসহায়ত্ব।
ভারত, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের মত অবস্থানে থাকলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড হয়ত অনেক আগেই সাকিব তামিমকে বাদ রেখেই দলকে এগিয়ে নেবার চিন্তা করতো। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি কেননা সাকিব তামিমকে বাদ রেখে দল গড়ে নিজেদের অবস্থান মজবুত রাখার মত শক্তপোক্ত জায়গাতে পৌছাতে পারেনি বিসিবি।
ভবিষ্যৎ এ হয়ত এমন ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রভাব বোর্ড আর দলে পরতে দিতে চাইবে না৷ বরং সেই একাধিক ক্রিকেটারকে বাদ রেখেই চিন্তা করবে৷ সাধারণ মানুষও সেই পথেই সমর্থন দিবে কেননা সমর্থকরা ইতিমধ্যে সাকিব তামিমের ব্যাক্তিগত সম্পর্কের রেষারেষিটার বাজে প্রভাবে অতিষ্ঠ।
অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটটা এখনো বালক বা কিশোর থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি। তেমনটা হলে সাকিবের মত বিশ্বসেরা ক্রিকেটার কিংবা তামিমের মত এমন প্রতিভাবান ও সফল ওপেনারের আগমনটা দেশের ক্রিকেটের প্রাপ্তবয়স্ককালীন সময়ে হলে হয়ত তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত এই নেতিবাচক সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কারর মাথা ব্যাথার প্রয়োজন পরতো না।
সাকিব তামিমের অনেক অবদানের কারনেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের আজ এই অবস্থানে। কিন্তু তারা কখনোই বাংলাদেশের ক্রিকেটের উর্ধ্বে নন। উর্ধ্বে হওয়াতেই বিশ্বকাপের এক দিন আগেই সব ফোকাস গিয়েছে তাদের দুইজনের প্রতি। অথচ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া দলের বাকি ১৩ সদস্য থেকেছেন অনেকটাই নিভৃতেই। ক্ষতিটা মূলত এখানেই..
সাকিব-তামিমের কি ভুলসময়ে উত্থানই বড় দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য!